মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স: ফতোয়ার অপব্যাখ্যায় দোররা মেরে কথিত পীর বাবার হাতে মেয়ে খুনের ঘটনার ১০ বছর পর বিচারকাজ শুরু করেছেন আদালত।
উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষের মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন (কোয়াশমেন্ট) খারিজ হওয়ায় কথিত পীর বাবা মতিনের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার শুরু হয়।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে অতিরিক্ত ২য় মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আমিরুল ইসলামের আদালতে বিচার শুরু হয়। এ দিন মেয়ে হাফসা হত্যা মামলায় পিতা কথিত পীর মতিনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন পুত্র ও কন্যারা।
জানা যায়, ২০০৯ সালে ১৯ আগস্ট পাহাড়তলীর গ্রীণভিউ আবাসিক এলাকার পীর মতিনের আস্তানায় নিজের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করতে চাওয়ায় মেয়ে হাফসাকে দোররা মারেন বাবা মতিন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন চাচা আব্দুস সবুর ও বাবার কথিত প্রেমিকা নার্গিস। হাফসার সঙ্গে তার আরও দুই বোনকে একই অভিযোগে মাথা ন্যাড়া করে দোররা মেরে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়। হাফসাকে মারার পর রাতের আঁধারে ঘরের মধ্যে জানাযা পড়ে গোরস্থানে কবর দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করতে গেলে মামলা নেয়নি থানা।
পরে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সরেজমিন তদন্ত এবং নির্যাতিতদের আইনী সহায়তা দেওয়া হয়। এ ঘটনার নির্যাতিতদের পক্ষে তার এক ভাই বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় আদালতে মামলা দায়ের করেন।
পরে আদালত সংশ্লিষ্ট থানাকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। এ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি ভুল বুঝাবুঝি উল্লেখ করে ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। আদালতে প্রতিবেদনের বিষয়ে মামলার বাদি নারাজী দিলে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে মামলার মূল আসামি ভণ্ডপীর মতিন (৬০) সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেন।
মামলায় কথিত পীর মতিন ছাড়াও মতিনের ভাই সবুর (৪৫), স্ত্রী ডা. শাহিদা বেগম (৪০), মতিনের প্রণয়সঙ্গী নার্গিস বেগম (২০) এবং ছোট বোন বিনু বেগমকে আসামি করা হয়।
পরে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। কিন্তু ওইদিন আদালতে মামলার প্রধান আসামি কথিত পীর আব্দুল মতিনের পক্ষে উচ্চ আদালতের ফৌজদারি রিভিশন ফাইল করলে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উচ্চ আদালত বিচারিক আদালতের মামলায় স্থগিতাদেশ দেন।
আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান জানান, ২০১৯ সালে ১৪ মে উচ্চ আদালতে আসামির ফৌজদারি রিভিশন খারিজ হলে আদালত ৬ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। মামলার এজাহার বহির্ভূত সাজানো সাক্ষী উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ মামলা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর মামলার বাদি আবু দারদা জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে আজ (সোমবার) অন্যান্য সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দেন।